চুইঝাল বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় মশলা। চুইঝালের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Piper chaba যা একধরনের বিশেষ মশলা যেটি বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জন্মায়। এটি সাধারনত মাংস রান্নায় ব্যাবহার করা হয়। রান্নায় এটি ব্যাবহার করলে রান্নায় আসে এক বিশেষ স্বাদ ও ঝাঁঝালো ঘ্রান। মাংস রান্না ছাড়াও যেকোনো রান্নায় এটি ব্যাবহার করা হয়।
চুই ঝাল, হচ্ছে পিপারাসি পরিবারের সপুষ্পক লতা। পান ও চুই ঝাল একই পরিবারের। চুই ঝাল গাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। এর কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। ঝাল স্বাদের হলেও চুইয়ের নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে।
চুই ঝালের পরিচিতিঃ
- বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় জনপ্রিয় একটি মসলা হলো চুইঝাল। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
- চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো, দেখতে সবুজ রংয়ের। চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ।
- চুইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল- ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে।
- মূলত,রান্নার জন্যে চুইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস,মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল থাকে।
- চুই এর শিকড়ে রয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ পিপারিন।
![চুইঝাল Chui Jhal চুই ঝাল](https://kiotiv.com/thapaste/2022/08/fresh-chui-jhal.jpg)
চুইঝালের উপকারিতা।
- রুচি বাড়াতেঃ সমূহরুচি বাড়াতে,খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- ক্যানসার প্রতিরোধেঃ এতে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- পাকস্থলীর সমস্যা দূরীকরণেঃ পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ দূর করে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- মানসিক প্রশান্তিতেঃ স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে।
- ব্যথানাশকঃ আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করে শরীর সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
- ঘুমের ওষুধ হিসেবেঃ এটি ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
- প্রসূতি ব্যথাঃ প্রসূতি মায়ের প্রসব-পরবর্তী ব্যথা প্রশমনে ভালো কাজ করে চুইঝাল। সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা কমাতে চুইঝাল ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
- অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ওষুধ হিসেবেঃ অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে চুইঝাল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।
রান্নায় কিভাবে চুইঝাল ব্যাবহার হয়?
চুই ঝাল দিয়ে মাংস রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কে ইউটিউবে শত শত রেসিপি আছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, রান্নায় চুইঝাল ব্যাবহার করার জন্য চুইঝালগুলোর বাকল ছুরি দিয়ে ছিলে ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এরপর মাংস কষানোর সময় চুইঝালের টুকরো গুলোকে দিতে হয়। রান্না শেষ হলে চুইঝাল এর টুকরো গুলো নরম হয়ে আসে। এতে চিবাতে সুবিধা হয়।
চুই ঝাল সংরক্ষনের পদ্ধতিঃ
চুই ঝাল সংরক্ষণের বিশেষ কয়েকটি পদ্ধতি আছে, এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি হলো ফ্রিজে রাখা।সেক্ষেত্রে চুইঝালের ছাল-বাকল পলিথিনে মুড়ে ফ্রিজের নরমালে চেম্বারে রেখে দিতে হবে। অথবা, ছাল-বাকল পরিস্কার করে রান্নার উপযোগী করে কেটেকুটে বক্স ভরে ফ্রিজের ডিপেও রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে চুইঝালের স্বাদ কিছুটা কমে যেতে পারে।
ফ্রিজ ছাড়াও চাইলে প্রাকৃতিক উপায়েও সংরক্ষণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে চুইঝাল মাটিতে বিছিয়ে তার উপরে পাটের চট দিয়ে তাতে পানির ছিটা দিয়েও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
চুইঝালের দাম কত?
প্রকারভেদে চুই ঝালের দাম বিভিন্ন ধরনের হয়। আকারভেদে খুলনার দেশী চুইঝালের দাম ৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা হয়। চুই ঝালের কান্ড যত মোটা হবে দাম তত বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু অংশ হলো শিকড়ের অংশ। একে এঁটো চুইঝাল ও বলা হয়।
চুইঝাল কোথায় পাবেন?
চুই ঝাল খুলনা অঞ্চলে খুব সহজলভ্য হলেও খুলনার বাইরের এরিয়াগুলোতে চুই ঝাল তেমন পাওয়া যায় না। এই সমস্যা দূর করতে আমরা সরাসরি খুলনা থেকে সারাদেশে ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে ফ্রেশ চুইঝাল সরবরাহ করি। আমাদের ওয়েবসাইটে চুইঝাল অর্ডার করলেই চুইঝাল পৌছে যাবে আপনার বাসায়।আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে।
চুইঝাল একটি বিশেষ মশলা যা একবার খেলে এর স্বাদ মুখে লেগে থাকার মত। একবার চুইঝালের মাংস খাওয়ার পর এর স্বাদ এতই মজাদার যে দ্বিতীয়বার খেতে বার বার ইচ্ছা হয়। তবে দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো চুইঝাল সম্পর্কে জানে না। চুইঝাল সম্পর্কে মানুষ আরো বেশি জানলে এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে।